রোজকার মত আল্লাহর অশেষ রহমতে ফজরের ওয়াক্তে ঘুম ভেঙ্গে গেলো। তবে আমার মতো গুনাগার অলস বান্দা আজ থাক কাল পরবো বলে শুয়ে ই রইলো। নেট অন করে ফেসবুকে ঢুকেই খবরটা চোখে পড়লো আঁতকে উঠলাম। গাজীপুরের বনখুইড়া অঞ্চলে ঢাকাগামী মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস ট্রেন ভয়াবহ দুর্ঘটনার কবলে পরেছে।
মনটা আঁতকে উঠলো। আল্লাহ ক্ষমা করো। কত মানুষ জানি আহত নিহত হয়েছে। আর যারা এ কাজ করলো তারা কেমন মানুষ? তাদের কি একবারও মনে হল না, কতগুলো মানুষ হতাহত হতে পারে। আল্লাহ তাদের হেদায়েত দাও।
ফজরের নামাজ পরে বের হয়েই বাদল এবং জহিরকে বললাম যাবি?
বাদল বলল কোথায়
জহির বলল ভাওয়ার গাজীপুর নাকি?
আমি বলল হুম দোস্ত। চল যেয়ে দেখি কি অবস্থা। যদি মানুষ গুলোকে হেল্প করতে পারি।
জহির বলল হুম দোস্ত চল।
বাদল কিছু বুঝছিল না ওকে খুলে বলে তিনজন হাঁটা লাগালাম। সকাল সকাল যানবাহন পাওয়া যাবার কথা না। ভালোই শীত অতি দ্রুত পা চালাতে লাগলাম। এখনো পৌষ মাস আসতে বাকি আছে সপ্তাহ খানেক। তবে যে পরিমান কুয়াশা এখনই। এবার ঢের শীত পড়বে মনে হয়।
চতর বাজার যেতেই জসিম ভাইকে দেখলাম খেজুরের রস নিয়ে যাচ্ছে। লোভ সামলাতে পারলাম না। আমি আর বাদল দু গ্লাস অমৃত পান করলাম। জহির খেলো না। নিপাই ভাইরাস নিয়ে ও খুব আতংকিত। বললাম এতো ভয় পাস তুই। খুন গুলো কিভাবে করিস হা? জহির বলল খুন মানে? বাদল বলল সেকি স্বপ্নে না ধর্ষকদের হত্যা করিস বাস্তবে অমন ই ঘটে। জহির বলল অহ এই ঘটনা? অনেক দিন দেখি না সপ্ন। আমি বলল হুম দোস্ত। তোর আর বাদলের কাহিনী গুলো নিয়ে গল্প লিখলে মন্দ হবে না। বাদল বলল হুম আমাদের টা নিয়ে গল্প হবে আর তোর এক একটা প্রেম কাহিনী নিয়ে মুভি হবে দোস্ত। খালি অটো রিকশা দেখে বললাম, ট্রেন কোথায় অ্যাকসিডেন্ট হয়েছে জানো? অটো চালক বলল আমাদের বাসার ঐদিকেই ভাই যাবেন? হুম চলো। অটোতে উঠে হিমেল বাতাসে শীতের তীব্রতা আরো বেড়ে গেলো । শীতে কাঁপতে লাগলাম। বনখুইড়া বাজার পাড় হয়ে গান্ধীবাড়ির একটু আগে রেল ক্রসিং এ যেয়ে নামলাম। নামতেই দেখি লোকজন মেলা লেগেছে। আহত লোকদের যে যার মতো সাহায্য করছে।
ঘটনা স্থলে যেয়ে আরো আঁতকে উঠলাম।
সাতটি বগি লাইনের দু ধারে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। ইঞ্জিন এবং আরো দুটো বগি অনেক দূরে গিয়ে পরেছে। আততায়ীরা গ্যাসের সিলিন্ডার এবং গ্যাসের সাহায্যে নাকি লাইন কেটে ফেলেছে। প্রায় বিশ ফিট লাইন। ধর্মঘট হোক কিংবা যাই যার এ কাজ করেছে তারা মানুষের মধ্যেই পরে না। এলাকাবাসীর সাথে আমরা ও কাজে লেগে গেলাম। আটকা পড়া আহত লোকদের উদ্ধার করতে লাগলাম। একজন মারা গেছে ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্নাইলাহি রাজিউন।
লোকো মাস্টার (ট্রেনের চালক) কে উদ্ধার করেছে কিছু ভাই। তার অবস্থা ভয়াবহ। জহির বলল দোস্ত ওরা কি ভাবে এ কাজ করলো বল। আমি বললাম দোস্ত দেখ ট্রেন টা যদি ডাউন না হয়ে আপ হত এই ব্রিজের মাঝে কি অবস্থা হতো? বাদল বলল দোস্ত রাতের ট্রেন যাত্রী কম। ভাগ্যিস দিনে ঘটেনি। বা আরো বড় কিছু হয়নি। আমি বললাম দোস্ত কথা পরে বলা যাবে সাহায্য কর। এক বগিতে যেয়ে ঢুকলাম আমি। দেখি একজন মানি ব্যাগ কুড়িয়ে পকেটে ঢুকাচ্ছে। একজন হকারের পরে থাকা সিদ্ধ ডিম খাচ্ছে। পাশের লোকটা বলল দেখলেন দাদা মানুষের বিবেক। আমি হা হয়ে চেয়ে রইলাম। লোকটা বলল দাদা এখন তো না হয় ৮০% লোক উদ্ধার করা শেষ আমি দেখেছি একজন কে আহত লোকের পকেটে হাত দিয়ে টাকা বের করে নিচ্ছে। মানুষের ব্যাগ নিয়ে চলে যাচ্ছে কতজন। এরা কি মানুষ? এদের কি মনে হয়না তাদের ও এই বিপদ হতে পারতো। ভগবান কি এদের দেখছে না?
আইন শৃঙ্খলা বাহিনী সাংবাদিকের সংখ্যা দ্রুত বাড়তে লাগলো। এতক্ষণে লুটপাট প্রায় শেষ। শুধু লুটপাট কারিদের কথা বলে বাকিদের ছোট না করি। এলাকাবাসী এবং ট্রেনের আহত না হওয়া অনেক যাত্রী যেভাবে এই শীতের ভোরে শীতের তীব্রতা ভুলে গিয়ে মানুষের সেবায় লেগে গেছে তাদের কাজের কাছে ঐসব লুট তুচ্ছ।
জহির দৌড়ে এলো। বলল দোস্ত তোর ভাবির এক চাচা নাকি ট্রেনে ছিলো ঢাকা যাচ্ছিল। ওখান থেকে আমাদের বাসায় আসার কথা। ওনার ফোনে রিং বাজছে ধরছে না। একটু লাশের কাছে যাবি? এমনিতেই মন বিক্ষিপ্ত ছিলো। আরো আঁতকে উঠলাম।বলল চল দোস্ত।। ইন শা আল্লাহ ওনার সাথে এমন কিছু হয়নি।
নিহত ব্যক্তির পরিচয় পেলাম। বাড়ি গফরগাঁও। বাদল বলল দোস্ত কি লাভ হল এ কাজ করে বল? সরকার পতনের জন্য নিরীহ মানুষের প্রাণ নেওয়া কোন সিস্টেমে পরে? আমি বললাম জানিনা দোস্ত। গত একমাসে ট্রেন বাস সহ হাজারের উপর যানবাহনে আগুন দেওয়া হয়েছে। বুঝলাম তারা ক্ষমতা চায়। সবাই এক মত আদর্শের না হওয়া দোষের কিছুনা। তবে দেশের ক্ষতি করা, মানুষের জীবন নিয়ে খেলা এগুলো যারা করে তারা কোনো দলের নয় জাতের নয় তারা অমানুষ। জহির বলল দোস্ত বিরোধী দলই ই যে করেছে কি ভাবে বললি? এমন ও তো হতে পারে তোর সারকারের কাজ এগুলো। আমি বললাম থাম তো দোস্ত। কে করেছে জানিনা। তবে যে বা যারা করেছে তারা অমানুষ। আর আমরা যারা উদ্ধার কাজে নেমেছি তারা যে দলেই ই সাপোর্ট করি যে ধর্মেই বিশ্বাস করি আমরা মানুষ।
জহিরের ফোন বেজে উঠলো। ওর আত্মীয় সুস্থ আছে। ও তৃপ্তির হাসি না হেসে বলল দোস্ত আমার কেউ হয়তো এখানে নেই। তবে যারা আহত যারা ভুক্তভোগী তারা কারো বাবা কারো মা কারো সন্তান। এমন দেশ আমরা চাইনা। আমরা চাই সোনার বাংলাদেশ।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
লেখার সাথে বিষয়ের সামঞ্জস্যতা
ব্যাখ্যায় লেখকের বক্তব্য
এক শীতের সকালে ঘুম ভেঙ্গে খবর পেলাম বাসার অদুরে ট্রেনে দুর্ঘটনার খবর। আহত নিহত মানুষ উদ্ধার নিয়ে এবার গল্প
১৯ এপ্রিল - ২০২৩
গল্প/কবিতা:
১৪ টি
সমন্বিত স্কোর
৫.৭১
বিচারক স্কোরঃ ২.৭১ / ৭.০পাঠক স্কোরঃ ৩ / ৩.০
বিজ্ঞপ্তি
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।